মুরগীর খামার তৈরী করতে যা যা প্রয়োজন

বাংলাদেশে মুরগীর খামার তৈরীতে ও উন্নত জাতের মুরগী পালনে জনগনের আগ্রহ দিন দিন বেড়ে চলছে। মুরগী লালন পালনের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া বেশ উপযোগী। সাধারন জনগনের আগ্রহের সাথে সাথে সরকারও উন্নত জাতের মুরগী পালনে সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।



কারন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে আমিষ জাতীর খাদ্যের খাটতি কাটিয়ে ওঠা কোন ভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে দেশে পুষ্টির অভাবে মানসিক বিকাশ ‍বৃদ্ধিতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে অগণিত শিশুর। আর এ বিষয়কে সামনে রেখে আমরাও একটি মুরগি নিয়ে এক মোরগের সংসার গড়তে পারি।

মুরগীর খামার তৈরী করে আমরা লাভবাব হতে পারি। যাতে করে মাংস ও ডিমের চাহিদা পুরণ হবে।
মুরগির থাকার ঘর নির্বাচন: একটি মোরগের ঘর গড়তে প্রথমে দরকার হবে মুরগির ঘর ঠিক করা। মুরগির থাকার ঘর উচ্চতায় চার ফুট, প্রস্থে সাড়ে ৪ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৬ ফুট তৈরী করা।এর ভেতরে ডিম পাড়ার খাঁচা, খাবার পাত্র ও পানির পাত্র রাখা যেতে পারে। আরও খেয়াল করা উচিৎ।

  •  মুরগীর ঘর সবসময় শুকনো ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  •  খোলামেলা স্থানে ঘর তৈরী করতে হবে
  •  ঘরের মেঝে তিন ইঞ্চি পুরু হয় এমন পরিমাণ তুস, কাঠের গুঁড়া অথবা বালির সঙ্গে আধা কেজি গুঁড়া চূর্ণ ভালোভাবে মিশিয়ে সমানভাবে বিছিয়ে দিন।
  • মেঝের কাঠের গুঁড়া বা তুস ৭ দিন পরপর ওলট-পালট করে দিতে হবে। স্যাঁতসঁতে হলে বা জমাট বেধে গেলে তা পরিবর্তন করতে হবে। ঘরে আটকে না রেখে বাইরেও মুরগি পালন করা যেতে পারে।

মুরগী সংগ্রহের স্থান : 

উন্নত জাতের মুরগী কোথায় পাওয়া যাবে এ নিয়ে ভাবনার কোনো কারণ নেই। ঢাকার মণিপুর কেন্দ্রীয় মোরগ-মুরগী খামার থেকে কিংবা কৃষি খামার সড়কের পশুসম্পদ অধিদপ্তরের বিক্রয় কেন্দ্র থেকে উন্নত জাতের মুরগী সংগ্রহ করা যেতে পারে। 

চট্টগ্রাম এবং রাজশাহী শহরে যারা উন্নত জাতের মুরগী পালনে আগ্রহী তারা চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এবং রাজশাহীর রাজবাড়ী হাট আঞ্চলিক মুরগীর খামার থেকে উন্নত জাতের মুরগী সংগ্রহ করতে পারেন।

মুরগীর খাদ্য : 

মুরগীর বেশি ডিম পেতে হলে মুরগিকে দৈনিক সুষম খাবার খেতে দিতে হবে, প্রত্যহ প্রতিটি মুরগিকে ১১৫ গ্রাম সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি ও ২৫ গ্রাম সবুজ শাক-সবজি বা কচি ঘাস কুচি করে কেটে খেতে দিন। আমরা নিজেরাই সুষম খাদ্য তৈরি করতে পারি।

সুষম খাদ্যের উপাদানগুলো নিন্মে দেওয়া হলো :
খাদ্য উপাদান-গম বা ভুট্টা ভাঙা বা চাউলের খুদ ৪০০ গ্রাম। গমের ভুসি ৫০ গ্রাম। চালের কুঁড়া (তুষ ছাড়া) ২৫০ গ্রাম। তিলের খৈল ১২০ গ্রাম। শুঁটকি মাছের গুঁড়া ১০০ গ্রাম। ঝিনুকের গুঁড়া ৭৫ গ্রাম। সুষম খাদ্য মোট ১ কেজি।

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা :

মুরগীকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত টিকা দিতে হবে। পশুসম্পদ বিভাগ থেকে বিনামূল্যে রানীক্ষেত, কলেরা, বসন্ত রোগের প্রতিষেধক টিকা সংগ্রহ করা যেতে পারে। আরেকটু খেয়াল করতে হবে, মুরগি অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে পশু চিকিৎসাকেন্দ্রে পরামর্শ নিতে হবে।

অসুস্থ মুরগীকে চিহ্নিত করে সাথে সাথে আলাদা করতে হবে।এছাড়া রোগাক্রান্ত মুরগীর বিষ্ঠা ও লালা সতর্কতার সঙ্গে সংগ্রহ করে তা মাটিতে পুঁতে রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে।

মুরগীর খামারের আয়-ব্যয় :

 মুরগীর সংসারের জন্য একটি ঘর তৈরি করা বাবদ প্রায় দুই হাজার টাকা খরচ হতে পারে এবং ঘরটি বছর কয়েক ব্যবহার করা যাবে। ছয় মাস বয়সের নয়টি মুরগী এবং একটি মোরগের ক্রয়মূল্য ২ হাজার টাকা। এক বছর পর দশটি মুরগীকে প্রায় একই দামে বিক্রি করা যাবে। ডিম কিনলে ১টির দাম পড়বে ৮ টাকা। মুরগীর বাচ্চা কিনলে ১টির দাম পড়বে ৩০ টাকা।

নয়টির দাম হবে ২৭০ টাকা। প্রতি মাসে মুরগীর খাবার ক্রয় বাবদ প্রায় ৮০০ টাকা ব্যয় হবে। যদি আমরা নিজেরাই মুরগির সুষম খাবার তৈরি করি তাহলে খরচ আরও কম হবে।
৯টি মুরগী থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬টি ডিম পাওয়া যেতে পারে। ডিম বিক্রি করে প্রতি মাসে গড়ে ১৪৪০ টাকা আয় হতে পারে। উৎপাদিত ডিম, খাবার এবং বাচ্চা ফুটানোর ডিম হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

আপনার শ্রমে উৎপাদিত ডিমের একটি অংশ দিয়ে যদি বাচ্চা ফুটানো যায়, তাহলে দেশ এবং জাতি বেশ কিছু ফুটফুটে উন্নত জাতের মোরগ-মুরগীর বাচ্চা পাওয়া যেতে পারে।
মুরগীর খামারের ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা। 

উক্ত ব্যবসায় অল্প পুজি বিনিয়োগ করে খুব সহজেই অল্প সময়ে অনেক বেশী আয় করে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। তাই আমরা এ ব্যবসার কৌশল কাজে লাগিয়ে সফল উদ্যোগতা হতে পারি।

লেখকের মন্তব্যঃ

পরিশষে আমরা বলতে পারি এই আর্টিকেল টি পড়ে আপনার ও আপনার আশেপাশের মানুষের যদি উপকারে আশে তাহলে অনুগ্রহ করে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url